পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষ বাড়ছে - Panchagarh ।।পঞ্চগড় ০ কিঃমিঃ।।

Breaking

Sidebar Ads

C:\Users\Data Admin\Desktop

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, September 26, 2017

পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষ বাড়ছে

আট বছর ধরে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের সর্বত্র বাগান ও বসতবাড়িভিত্তিক কমলা চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষ করা হচ্ছে। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শতাধিক বাগান। ফলনও হয়েছে বাম্পার। চাষীরা কমলা চাষে পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য। কমলা চাষে চাষীদের মুখে হাসি ফুঁটেছে। এরই মধ্যে কমলা বিক্রি শুরু করেছেন পঞ্চগড়ের কমলা চাষীরা। এখানকার উৎপাদিত কমলার আকার, রং ও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়।

চাষী, কৃষি বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা পঞ্চগড়ের কমলাকে ভারতের দার্জিলিংয়ের সঙ্গে তুলনা করছেন। প্রতিটি বাগান ও বসতবাড়ির কমলা গাছ পাকা কমলায় ভরে গেছে। ২০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত কমলা ধরেছে একেকটি গাছে। কমলার রঙে রঙিন হয়ে আছে বাগানগুলো। কেউ কেউ কমলা বিক্রিও করেছেন। স্বল্প পরিশ্রমে ভাল ফলন ও মূল্য পাওয়ায় চাষীদের ভাগ্য বদলেছে। কমলার ফলনে চাষীরা খুশি হলেও কমলা উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নানা রোগে কমলা বাগান আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্কে আছেন চাষীরা।

পঞ্চগড়ের মাটি ও জলবায়ু কমলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার কমলা স্বাদে ও গন্ধে ভারতের কমলার বা বাজারের অন্যান্য কমলার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। অন্য ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা এখন কমলা চাষে এগিয়ে এসেছেন। স্বল্প খরচ ও পরিশ্রমে অধিক মুনাফা হওয়ায় কমলা চাষের পরিধি দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাষীরা প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করে আসছেন। পঞ্চগড় জেলার পাঁচ উপজেলায় ৭৩ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ করা হয়েছে। গড়ে উঠেছে ছোট বড় ও মাঝারি ধরনের শতাধিক বাগান। কেউ বা বাড়ির আঙিনার খোলা জায়গায় কমলার বাগান করেছেন। এ সব বাগানে কমলা গাছের সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। প্রতিটি গাছে ২০০ থেকে আড়াইশ কমলা ধরেছে।

চলতি মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ১৯৫ টন কমলা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। এ জন্য প্রায় সাত হাজার কৃষককে কমলা চাষের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের কমলা অত্যন্ত সুস্বাদু ও রসালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কমলার ফলনও ভাল হয়েছে। ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় বাজারে এ কমলার চাহিদা বেশি। বর্তমানে পঞ্চগড়ের কমলা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রফতানি হচ্ছে। কমলার ভাল মূল্য পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা।

জেলার বোদা উপজেলার সর্দারপাড়া এলাকার কমলা চাষী অচিন্ত্য কুমার কারকুন জানান, ২০১১ সালের জুনে কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ব্যাপক ফলন আসলেও কোনো কোনো চাষীর কমলা পাকার আগেই গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। কমলা উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাভজনক এ ফল চাষে কোনো কারিগরি সহায়তা বা পরামর্শ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না চাষীরা। প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আক্রান্ত কমলা বাগানে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

কমলা উন্নয়ন প্রকল্প ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষীরা আগের মতো কৃষি অফিসের সুযোগ-সুবিধা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না। সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় চাষীরা কমলা চাষে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রকল্প শেষ হওয়ায় কেউ চাষীদের লাগানো কমলা গাছ দেখতে যাচ্ছেন না। খোঁজখবর না নেওয়ায় অনেকেই ঠিকমতো গাছের যত্ন নিচ্ছেন না। গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও রোগের প্রকোপ বাড়ছে। সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হচ্ছেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা এলাকার কমলা চাষী হাবিবুন নবী প্রধান জানান, তিনি প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে কমলার বাগান করেছেন। গত তিন বছর পর্য়ন্ত এ সব বাগান থেকে ফল উত্তোলন করছেন। গত বছর প্রায় এক লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। এবার তার দ্বিগুণ টাকায় কমলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

তার মতোই আরেক চাষী সালাউদ্দিন প্রধান। তার বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা বড়বাড়ী গ্রামে। তিনি কলেজে অধ্যাপনা করেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশের জমিতে কমলা বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানে চার শতাধিকের বেশি কমলাগাছ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কমলা একটি লাভজনক ফসল। গত ৫-৬ বছর থেকে আমি এ সব বাগানের কমলা বিক্রি করে আসছি। প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করি। আমাদের কমলা সাইজে বড় ও অত্যন্ত রসালো। এ সব কমলা বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। বাড়ি থেকেই পাইকাররা কমলা কিনে নিয়ে যায়।’

কমলা ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জানান, পঞ্চগড়ের কমলা অত্যন্ত ভাল মানের। ফরমালিনমুক্ত কমলা হওয়ায় বাজারে এ সব কমলার চাহিদা বেশি। এ জেলার কমলা আমরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সহির উদ্দিন আহমদ জানান, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন কমলার আবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে। প্রথম দিকে শখের বশে চাষকৃত কমলা গাছের ফলন দেখে অনেক চাষীই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলার বাগান করেছেন। সালাউদ্দিন প্রধান, অচিন্ত্য কুমার কারকুন, বাচ্চু মিয়া, হাবীব প্রধান, সাজেদুর রহমানসহ জেলায় শতাধিক সফল কমলা চাষী ৭ থেকে ১০ বছর ধরে কমলা উৎপাদন করে আসছেন। কমলা আমদানি হ্রাস ও এর আবাদ বৃদ্ধি, পুষ্টি চাহিদা মেটানো ও কৃষকের আয় বৃদ্ধির জন্য সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় “কমলা উন্নয়ন প্রকল্প” হাতে নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ের সদর, বোদা, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় কমলার চাষ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে ট্রেনিং দিয়ে বিনামূল্যে কমলার চারা বিতরণ করা হয়। তারপর থেকে কমলা চাষে এগিয়ে আসেন চাষীদের বিরাট অংশ। বর্তমানে কমলা চাষে সফল কৃষকদের দেখাদেখি ক্ষুদ্র চাষিরাও কমলা চাষে এগিয়ে এসেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পের অধীনে শতাধিক বাগান ও বসতবাড়ির আশপাশে প্রায় ৪১ হাজার কমলার গাছ রোপণ করা হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২০০ টন কমলার উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী মৌসুমে উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কমলা উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধের কথা স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমিসহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কমলা চাষীদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। পরামর্শের বাইরে আমাদের করার কিছুই নেই। চাষীদের কথা বিবেচনা করে সরকার ইতোমধ্যে সাইট্রিস ডেভেলভমেন্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর ফলে কমলার চাষ শুধু বাড়বেই না, মাল্টা, লেবুসহ ফল চাষীরা উপকৃত হবেন।

তিনি আরও জানান, পঞ্চগড় জেলার মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে জেলায় ছোট-বড় শতাধিক কমলার বাগান গড়ে উঠেছে। বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষাবাদ হচ্ছে। চাষীরাও মুনাফা পাচ্ছেন। চাষীদের কথা বিবেচনা করে আবার সাইট্রিস ডেভেলভমেন্ট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, চাষীরা এতে উপকৃত হবেন ও কমলার চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
কৃষকদের কমলা চাষে প্রশিক্ষণ, মাঠ পর্যায়ে তদারকি, বিনামূল্যে চারা, সার, কীটনাশক বিতরণ করাসহ সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে পঞ্চগড়ের কমলা চাষ অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে অবদান রাখবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে কমলা চাহিদার বিরাট অংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। বাঁচবে বৈদেশিক মুদ্রা ও পঞ্চগড় হবে দেশের কমলা উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল।


আমাদের পেইজ :- www.facebook.com/panchagarh0km
আমাদের গ্রুপ:- www.facebook.com/groups/panchagarh0km/
আমাদের ব্লগ:- www.panchagarh0km.blogspot.com

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here