চা পাতার মান নিয়ে ক্রয়-বিক্রয়ে নানামুখী জটিলতার কারণে পঞ্চগড়ে চা শিল্পের
ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখা দিয়েছে
উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। এ জেলায় প্রতিবছর চায়ের আবাদ বেড়ে চলেছে। ইতিমধ্যে
ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক বাগান। বেশির ভাগ বাগানে টোকনাই
ভ্যারাইটির টিবি জাতের চা চারা রোপণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিটিআরআই
উদ্ভাবিত বিটি-২ জাতের চা-পাতার চায়ের চাহিদা বেশি। দামও ভালো। আর টোকনাই
ভ্যারাইটির টিবি জাতের চার চাহিদা ও দাম কম হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষ এ
জাতের চা-পাতা ক্রয় করতে অনিহা প্রকাশ করাসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের কারণে
চাষিরা বিড়ম্বনার শিকার হওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দায়িত্বশীল সূত্র মতে,
দেশের অভ্যন্তরে যে হারে চায়ের চাহিদা বাড়ছে সেভাবে চা উৎপাদন বাড়ছে না। চা
রপ্তানিও শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
এ অবস্থায় দেশে চা উৎপাদন বৃদ্ধি করার
জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও সঠিক পরিকল্পনা ও
পরামর্শের অভাবে যুগোপযোগী চা বাগান গড়ে উঠছে না। পঞ্চগড় জেলায় ৩
ক্যাটাগরিতে চা চাষ হচ্ছে। ৫ একরের নিচে স্মল গ্রোয়ার্স বা ক্ষুদ্র চা চাষ,
৫ থেকে ২০ একরের মধ্যে স্মল হোল্ডার্স ও এর চেয়ে বেশি জমিতে এস্টেট।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ৯টি
নিবন্ধিত এস্টেট বা বড় বাগান, ১১টি স্মল হোল্ডার্স ও বিভিন্ন এলাকায় ৪৯৮টি
স্মল গ্রোয়ার্সের চা বাগান রয়েছে। সব মিলিয়ে দেড় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে
চা চাষ হচ্ছে। কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট বাদে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি
লিমিটেড বা টিটিসিএল, করতোয়া চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা, গ্রীন কেয়ার চা
কারখানা, গ্রীন এনার্জি চা কারখানা ও নর্থ বেঙ্গল সেন্ট্রাল চা কারখানায়
কাঁচা চা-পাতা কেনা হচ্ছে। চা কারখানাগুলো পরিবহন খরচসহ প্রতি কেজি কাঁচা
চা-পাতা ক্রয় করছে ২৫ টাকা দরে। এই চা কারখানাগুলো গত বছর এক কোটি ১৮ লাখ
৬২ হাজার কেজি কাঁচা চাপাতা কিনেছে। যা থেকে তারা উৎপাদন করেছে ২৫ মিলিয়ন
কেজি চা।
চলতি বছর আরও বেশি পরিমাণ চা উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে
চায়ের আবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও আবাদকৃত টোকনাই ভ্যারাইটির টিবি-২৬, ২৩ ও ২৫
জাতের চায়ের দাম চট্টগ্রামের নিলাম বাজারে কমে গেছে। রং ও ফ্লেভার ভালো
হওয়ায় বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিটি-২ জাতের চায়ের চাহিদা এখন শীর্ষে। দামও
তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এজন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাত দেখিয়ে
স্বল্প পরিমাণে কৃষকদের কাছ থেকে চাপাতা ক্রয় করছে। সুযোগ বুঝে কারও কারও
কাছ থেকে ৩০, ৪০ ও ৫০ শতাংশ চাপাতা বেশি নেয়া হচ্ছে। এতে চাষীরা ক্ষতির
সম্মুখীন হচ্ছে।
চা বোর্ডের তথ্য মতে, বর্তমানে বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিটি-২ জাতের চা নিলাম
বাজারে বিক্রয় হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ২২০-২৩০ টাকা দরে। আর পঞ্চগড়ে
উৎপাদিত টোকনাই ভ্যারাইটির চা বিক্রয় হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০-২০০ টাকা দরে।
সূতমতে, পঞ্চগড় জেলায় চা চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে চাচাষিরা পার্শ্ববর্তী
ভারত থেকে টিবি ২৬, ২৩ ও ২৫ ভ্যারাইটির চায়ের কাটিং এনে চারা করে তা জমিতে
লাগায়। এই জাতের চা রোপণের দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে পাতা তোলা যায়। আর
বিটি-২ ভ্যারাইটির চা গাছ থেকে পাতা তোলা যায় চার বছর পর থেকে। আবার প্রতি
একর জমির চা বাগান থেকে টিবি ভ্যারাইটির চা পাওয়া যায় প্রায় ৮ হাজার কেজি।
সেখানে বিটি-২ জাতের বাগান থেকে পাওয়া যায় ৫ থেকে ৬ হাজার কেজি।
তাই
চাচাষিরা টিবি জাতের চা চারা দিয়ে চা বাগান করে আসছে। আর কৃষকদেরও বিটি-২
জাতের চা চারা দিয়ে বাগান করার আগ্রহ কম। কারণ পঞ্চগড়ের মাটিতে এই জাতের চা
উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় এবং কারখানাগুলো একই দরে চা পাতা ক্রয় করার জন্য
তারা টিবি ভ্যারাইটির চারা দিয়ে চা বাগান করছে। চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক
অফিসের ঊর্ধ্বতন পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন শিকদার বলেন, কাঁচা চা পাতার
চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভজনক হিসেবে অনেকেই নতুন করে চা চাষে
আগ্রহী হচ্ছেন। তবে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার পরও তারা বিটি-২ জাতের চা চারা
দিয়ে বাগান করছে না। এতে করে পঞ্চগড়ে চায়ের আবাদ বাড়লেও এখানকার উৎপাদিত
চায়ের মান বাড়ছে না। নিলাম বাজারেও এই জাতের চায়ের চাহিদা ও দাম বেশ কম।
তিনি নতুন করে চা চাষে আগ্রহী চাষিদের বিটি-২ জাতের চারা দিয়ে বাগান করার
পরামর্শ দেন।
আমাদের পেইজ :- www.facebook.com/panchagarh0km
আমাদের গ্রুপ:- www.facebook.com/groups/panchagarh0km/
আমাদের ব্লগ:- www.panchagarh0km.blogspot.com
|
No comments:
Post a Comment